৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

নেই বাবা-মা, মামার অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার বশেমুরবিপ্রবির আপন

আপডেট: মার্চ ২, ২০২৪

| palash

বাবা-মা সেরা সম্পদ। সন্তানের যেকোনো অর্জন তাদের হৃদয়ে এনে দেয় এক স্বর্গ সুখ। যতদিন তারা বেঁচে থাকেন, ততদিন সন্তানের কোনো বিষয়ই যেন ভাবতে হয় না। ছায়ার মতো লেগে থাকে তাদের ভালোবাসা। স্বর্গের সোপান পিতৃ-মাতৃহীন বেঁচে থাকা কতটা কষ্টের তা একমাত্র ভুক্তভোগী সন্তানেরাই বোঝেন। তাদেরই একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম আপন। বাবা-মা না থাকলেও মামার অনুপ্রেরণায় তিনি ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে চতুর্থতম হয়ে সুপারিশ প্রাপ্ত হন। কোনো ধরনের কোচিং ছাড়াই তিনি বিসিএসের প্রথম ভাইবাতে অর্জন করেন এই সফলতা।

আপনের জন্ম হয় মাদারীপুর সদরের রাস্তে গ্রামে। জন্মের দুই বছরের মাথায় মা আলেকজান বেগম পরলোকগমন করেন। বাবা মালেক মাতুব্বরকেও হারাতে হয় ২০২০ সালে। পিতৃ-মাতৃহীন আপনকে ভুলে যাননি তারা মামা ড. মোজাম্মেল হক খান। ভাগনেকে বাবা-মায়ের আদর দিয়ে আগলে রাখেন আপনকে। তখন থেকেই আপনকে সত্যিকারের বড় করে তোলার স্বপ্ন দেখিয়েছেন এই মামা। সবসময় বড় অফিসার ও একজন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার নানা দিকনির্দেশনা দিতেন। স্বপ্নবাজ আপনও হাল ছাড়েননি। মামার দেখানো পথে এগিয়ে যেতে থাকেন স্বীয় গতিতে।

আপন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালের শুরু থেকেই গোপালগঞ্জের পোস্ট অফিস মোড়ে নিজস্ব কোচিং পরিচালনা করতেন। সেখান থেকেই শুরু হয় বিসিএস পরীক্ষায় জন্য নিজের গৃহীত প্রস্তুতি। তিনি প্রিলিমিনারি, লিখিত কিংবা ভাইভার জন্য আলাদাভাবে কোনো কোচিং করেননি।

আপনের কর্মজীবন শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে। ৪৩তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরে সে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। সর্বপ্রথম ৪১তম বিসিএসে পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে অংশ নিলেও অর্জিত হয়নি কাঙ্ক্ষিত সফলতা। এরপর দমে যাননি তিনি। ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি ইতিমধ্যে তিনি ৪৪ ও ৪৫ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। সেখানেও তিনি কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করবেন বলে মনে করেন।

নিজের সফলতা নিয়ে বলতে গিয়ে আপন বলেন, বিসিএস আমি চেষ্টা কিংবা আশার বিশ্বাসী না। আমি তাকদিরে (ভাগ্যে) বিশ্বাসী। চেষ্টা আর ভাগ্য মানুষের সহায় থাকলে ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই।

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আসলে পড়ার বিকল্প নেই। সঠিক পরিকল্পনা আর কৌশলগত পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে এগোনো দরকার। এক্ষেত্রে কোচিংয়ের থেকেও নিজের কৌশলগত পড়াশোনা বেশি দরকারি। চাইলে কেউ কোচিং করতেও পারেন৷ তবে সাফল্য অর্জন করা ক্যাডারদের পরামর্শ আর দিকনির্দেশনা সবচেয়ে বেশি কাজে দেয়।

আগত ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যাদের প্রস্তুতি ভালো তারা পড়া বিষয়গুলোতে বারবার চোখ বোলাতে হবে। আর মধ্যম পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পুরাতন প্রশ্নব্যাংক আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়তে পারেন। তাছাড়া যাদের দুর্বলতা রয়েছে তারা তাদের দুর্বল বিষয়গুলোর বেসিক ঠিক করে এগিয়ে যেতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, আমি চাই না সবাই বিসিএস ক্যাডারমুখী হয়ে যাক। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার ক্ষেত্র অনুযায়ী চাইলে গবেষণাভিত্তিক আরো ভালো কিছু করা যায়। তবে যার যে বিষয় পছন্দ, সে বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে গেলে অবশ্যই সফলতা আসবে।