৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

পাঁচ সাংবাদিককে আটকে রেখে গালাগাল, জেলে পাঠানোর হুমকি এসিল্যান্ডের

আপডেট: মার্চ ১৪, ২০২৪

| nirvik sangbad


আদিতমারী (লালমনিরহাট) সংবাদদাতা ্। জমি খারিজ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়ায় পাঁচজন সাংবাদিককে অফিসে আটকে রেখে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমানের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে সহকারী কমিশনারের নিজ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। প্রায় ৪০ মিনিট পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএম মমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে অফিসগেটের তালা খুলে সাংবাদিকদের মুক্ত করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ওই সহকারী কমিশনার সাংবাদিকদের ‘দালাল’ বলে অপমান করতে থাকেন। এ সময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এদিকে, ক্ষিপ্ত হয়ে পেছনে থাকা একটি টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সনের মোটরসাইকেল আটকিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমান করেন আব্দুল্লাহ-আল-নোমান। এ ঘটনার পর জেলার কর্মরত সংবাদকর্মীরা শহরের মিশন মোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। দুপুর ২টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএম মমিন ঘটনাস্থলে যান। অভিযুক্ত সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা অবরোধ তুলে নেন।

সাংবাদিকরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সহকারী কমিশনার অফিসের তিনজন অফিস সহকারী ভূমি সংক্রান্ত শুনানি করছিলেন। সেখানে সহকারী কমিশনার উপস্থিত ছিলেন না। মাই টিভি ও ডেইল অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক মাহফুজ সাজু এ শুনানির ভিডিও করেন। এতে অফিসের স্টাফরা ক্ষুদ্ধ হয়ে সহকারী কমিশনারকে ডেকে আনেন। সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের নির্দেশে সাংবাদিক মাহফুজ সাজুকে আটকে রাখা হয়।

সাংবাদিক আটকে রাখার খবর পেয়ে প্রেসক্লাব থেকে সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম বিপু, লিয়াকত হোসেন, নিয়ন দুলাল, এসকে সাহেদ, ফারুক আহমেদ ও কাওছার আহমেদ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও অফিসে আটকে রাখা হয়।

সাংবাদিক মাহফুজ সাজু বলেন, সেবা নিতে আসা লোকজনের সাথে খারাপ আচরণ করা হয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে। এ তথ্য জানতে এসে সত্যতা পাই।

এসিল্যান্ড আমাকে অফিসে আটকালে সহকর্মীদের ফোন দেই, তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এসিল্যান্ড তাদেরকেও অফিসে আটকে রাখেন। এসিল্যান্ড সাংবাদিকদের সম্পর্কে খুবই অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছেন। আমাদের জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন।

এশিয়ান টেলিভিশনের লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি নিয়ন দুলাল বলেন, এসিল্যান্ডের সঙ্গে ওই অফিসের স্টাফরাও আমাদের গালিগালাজ করেন। মুক্ত না করলে এসিল্যান্ড আমাদের জেলে পাঠাতেন।

চ্যানেল আই’র ক্যামেরাপার্সন আব্দুল মান্নান জানান, মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল। কিন্তু কাগজগুলো সঙ্গে ছিল না। এসিল্যান্ডের কাছে ১০ মিনিট সময় চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষুদ্ধ থাকায় সময় দেননি।

লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক, এটিএন বাংলা ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধ আনোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। শনিবারের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সাংবাদিকরা আন্দোলনে যাবেন।

সাংবাদিকদের অফিসে আটকিয়ে গালিগালাজ ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। ‘কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এক মোটরসাইকেল আরোহীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন’ বলে তিনি দাবি করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএম মমিন সাংবাদিকদের জানান, সহকারী কমিশনারের অনুপস্থিতিতে অফিস সহকারীরা কোনোভাবেই জমির খারিজ শুনানি করতে পারেন না। বিষযটি জেলা প্রশাসক খতিয়ে দেখছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, তিনি পুরো ঘটনাটি অবগত হয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।