৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

‘গাঁজা দিয়ে’ প্লাস্টিক কারখানার মালিক-শ্রমিককে ফাঁসানোর অভিযোগ

আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৪

| nirvik sangbad

চট্টগ্রাম থেকে আবু জাফর চেীধুরী  চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন। মনসুরাবাদের তাঁর অফিস রুমের টেবিলের গ্লাসের নিচে রয়েছে ধর্মীয় উক্তির অসংখ্য সাঁটানো কাগজ। প্রথম দেখায় যেকারো মনে হতে পারে— ইন্সপেক্টর নন, রহুল আমিন যেন কোনো সাধু-সন্ন্যাসী।

তবে অফিসের বাইরে একেবারে অন্যরকম রহুল আমিন। বেশিরভাগ সময় পরনে থাকে জিন্সের প্যান্ট-গেঞ্জি। পোশাক দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর।

‘বহুরূপী’ সেই রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ উঠেছে ফ্রিল্যান্সার থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের! এ ঘটনায় হয়েছে মামলাও। যেখানে রুহুল আমিনের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে এসআই, এএসআই, কনেস্টেবলসহ ৮ জনকে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, চাঁদাবাজি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রতারণার অভিযোগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন— গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মো. রুহুল আমিন, এসআই মো. আলমগীর হোসেন, এসআই মৃদুল কান্তি দে, এসআই শাহ পরান জান্নাত, এএসআই বাবুল মিয়া, কনস্টেবল মো. মুমিনুল হক, মো. আব্দুর রহমান, সোর্স মো. জাহিদ হোসেন স্বাধীনসহ অজ্ঞাত আরও ২ থেকে ৩ জন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী শওগাতুল আনোয়ার খান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সরকারি নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার মু. আবু বক্কর ছিদ্দিককে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী হুসনুম মামুরাত লুবাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এর আগে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত আছে বলেও জানান। বিচারক মামলা গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর গুলবাগ আবাসিক এলাকার আল বারাকা কুলিং কর্ণার থেকে আবু বকর সিদ্দিক নামের এক ফ্রিল্যান্সারকে আটক করে ডিবির পরিদর্শক মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি দল। এসময় ফয়জুল আমিন বেলাল নামে আরেকজনকেও গাড়িতে তুলে নিয়ে যান মনসুরাবাদ গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে।

সেখানে থাকা অবস্থায় মাত্র ৩০ মিনিটে আবু বক্কর সিদ্দিকের আইডি থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলার হস্তান্তর করেন রুহুল আমিন। এছাড়া আবু বক্কর সিদ্দিকের সিটি ব্যাংক ও ইউসিবিএল অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা জাহিদ হোসেন স্বাধীনের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হস্তান্তর করে নিয়ে নেন।

রুহুল আমিন নিজের অপরাধ ধামাচাপা দিতে আবু বক্কর সিদ্দিক ও ফয়জুলকে ১০৩ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোবাইল ফোনটি জব্দ দেখান। পরে আদালতের মাধ্যমে তারা বেরিয়ে আসেন।

২৮ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি মোবাইল ফোন কিনে নিজের ফ্রিল্যান্সিং আইডি লগইন করে আবু বক্কর সিদ্দিক দেখতে পান, গত ১৩ বছর ধরে তার আয়ের সব ডলার নিয়ে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক রুহুল আমিন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রী হুসনুম মামুরাত লুবাবা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন কার্যকলাপে আমরা ভীতসন্ত্রস্ত। নানা শঙ্কায় দিন কাটছে। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপে শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে চাই।