১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

কারাগারে নারী বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন কীভাবে

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪

| palash

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কারাগারে থাকা অবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন নারী বন্দিরা। কারাগারেই জন্ম নিচ্ছে তাদের সন্তানরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যগুলিতে কারাগারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে ‘অ্যামিকাস কিউরে’ বা আদালত বন্ধু হিসাবে নিযুক্ত আইনজীবী তাপস ভঞ্জ’র।

আরো এমন ঘটনা সামনে আসতেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন উঠছে, জেলের নারী বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন কীভাবে। নারী বন্দিরা কি প্রেমে জড়িয়ে অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন?‌ নাকি তাদের অত্যাচার করা হচ্ছে?‌ এমন সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কলকাতায়। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কারাগারেই গর্ভবতী হয়ে পড়ছেন নারী বন্দিরা।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের একাধিক কারাগারে অন্তত ১৯৬ শিশু তাদের মায়ের সঙ্গে রয়েছে। তাদের পিতৃ-পরিচয় নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টকে এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছেন ওই আইনজীবী। তিনি বলেন, রাজ্যের সংশোধনাগারগুলির (কারাগার) পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে যে ছবি উঠে এসেছে সেটা উদ্বেগজনক। সংশোধনাগারে থাকাকালীন নারী বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন। ১৯৬ জন শিশু মায়ের সঙ্গে সংশোধনাগারে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সংখ্যাটা গত বছর পহেলা এপ্রিল পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ওই সংখ্যা হয়তো বেড়েছে বলেই আশঙ্কা করা যায়।

কলকাতা হাইকোর্টে এই প্রতিবেদন পেশ করার পর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি টি এস গণনম। বিষয়টি ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

অনেকে মনে করছেন, এভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া এবং সন্তান জন্ম দেওয়া কারাগার থেকে বের হওয়ার একটি কৌশল।

আদালতের বিচারপতি বলেছেন, আমি দেখতে পাচ্ছি নারী বন্দিরা কারাগারে থাকাকালীন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে আমার পরামর্শ, পুরুষ কর্মীদের সেখানে প্রবেশ নিষেধ করা হোক। নারী বন্দিদের কাছে যেন যেতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের জুন মাসে ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর সি লাহোটি সুপ্রিম কোর্টকে একটি চিঠি দিয়ে দেশের কারাগারের করুণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছিলেন।

সে সময় সর্বোচ্চ আদালতকে দেশের কারাগারগুলিতে বন্দিদের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা, অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ সেখানকার বেহাল পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছিল। রাজ্যগুলো যে বন্দিদের প্রতি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না, সে বিষয়েও উল্লেখ করেছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। সে বছর জুলাই মাসে ওই চিঠি ‘জনস্বার্থ রিট পিটিশন’ হিসাবে দায়ের হয়।

এই প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের হাইকোর্টগুলির প্রধান বিচারপতিদের নির্দেশ দেয় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করতে এবং সংশোধনাগারের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। হাই কোর্ট আমাকে নিয়োগ করে সংশোধনাগারের আবাসিকদের অভাব অভিযোগ শোনার জন্য এবং রাজ্যের প্রতিটি জেলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বলবৎ করতে, বলেছেন আইনজীবী তাপস ভঞ্জ।

রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, কোনো নির্দিষ্ট কারাগারের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তাহলে নিশ্চয়ই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।