৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

নতুন আলোয় ছড়ায় দ্যুতি

আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৪

| nirvik sangbad

সভ্যতার বিকাশ আর প্রকৃতি বিনাশ একে অপরের সমানুপাতিক, পরিপুরক ও সমান্তরাল। মহান স্রষ্ঠার অনিন্দ্য সুন্দর সুসজ্জিত পৃথিবীকে মানুষ তার প্রয়োজন মাফিক পরিবর্তন ও ব্যবহার উপযুগী করার চেষ্টা করেছে মানব সভ্যতার সুচনা লগ্ন থেকেই। মানুষের সীমিত জ্ঞান ও সীমাবদ্ধ বোধের উপর ভর করে এসব পরিবর্তন ও মোডিফিকেশনকে নাম দেওয়া হয়েছে উন্নয়ন। সত্যিকার অর্থে মানুষ উন্নয়নের নামেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করেছে প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে কে।
তাছাড়া মানুষের সুস্থ, সুখময় ও স্বাচ্ছন্দপূর্ণ স্বাভাবিক জীবনের উপকরণ সমুহকে মানুষ নানানভাবে বিপর্যস্থ করে প্রকারান্তরে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে মানবজাতির ভবিষ্যৎ ও বেঁচে থাকার প্রধানতম অবলম্বন পরিবেশ ও প্রকৃতিকে। জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ একটা পৃথিবীতে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুস্থিত ইকোসিস্টেমেই মানুষের বসতি ও বেঁচে থাকার সবচেয়ে নিরাপদ পরিস্থিতি বিরাজমান থাকার কথা। কিন্তু মানুষ তার অসচেতনতা, অবিবেচনা প্রসুত গর্হিত কর্মকান্ড, অদুরদর্শী হন্তারকের ভূমিকা পালন, আত্মস্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন নামক প্রকৃতি বিনাশে এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডে মনুষ্য প্রজাতিকে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্থ করছে। পৃথিবীতে মানুষ নামক প্রজাতিকে দ্রুত বিলুপ্তির দিকে ধাবিত করছে।
সমাজের অসচেতন, নির্বোধ ও অবিবেচক মানুষেরা তাদের প্রাত্যহিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয়ের স্বপক্ষে ভূমিকা পালন করছে বিধায় সচেতন, সুস্থ্য মস্তিস্কের প্রকৃতিপ্রেমিক ও সংবেদনশীল মানুষদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণের কাজের সুযোগ ও ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। যারা প্রকৃতি ও মানবিকতার পক্ষে তারা সবসময় সচেতন ও সংবেদনশীল থাকেন। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর কিছু দেখে বিবেকের চেতনায়, সচেতনতার তাড়নায়, বিশ্ববাসীর সম্ভব্য ক্ষতির আশংকায় নিরব থাকতে পারেন না। ঝাপিয়ে পড়েন নিজের সীমিত সক্ষমতা ও তাড়িত বিবেকের চেতনায়। চেষ্টা করেন অনাগত দিনের জন্য মনুষ্য প্রজাতির জন্য শুভকামনা ও শুভপ্রেরণার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে।
বোধসম্পন্ন, সচেতন, সুবিবেচক ও পরিবেশ-প্রকৃতি সংবেদনশীল মানুষেরা প্রকৃতির ক্ষতি ও বিনাশ সহ্য করতে পারেন না, থাকতে পারেন না নিরব ও নির্বিকার। এমনই সচেতন ও সংবেদনশীল নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকারী প্লাটফর্মের নাম বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) Bangladesh Biodiversity Conservation Federation (BBCF).
BBCF তার প্রতিষ্ঠার সুচনা লগ্ন থেকে দেশের জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেমে ভারসাম্য রক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সরকারি সংস্থা সমুহের সাথে সমন্বিতভাবে ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজের সাধারন মানুষকে সাথে নিয়ে দেশব্যাপী ব্যপক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সচেতনতা গড়ে তুলেছে। প্রকৃতিপ্রেমী হাজার হাজার তরুণ তরুণী, আবাল বৃদ্ধ বনিতা, শ্রেনী-পেশা নির্বিশেষে সকল মানুষ কে এই প্লাটফর্মে সমবেত করে প্রকৃতি সংরক্ষণের দুঅবার গন আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ টি আঞ্চলিক ও স্থানীয় সংগঠনের ছত্রছায়ায় প্রায় ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবী তরুন-তরুনী, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই বিবিসিএফ এর পতাকাতলে সমবেত হয় দেশের জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেম ভারসাম্য রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
গতকাল ২ রা মার্চ, ২০২৪ নাটোর জেলার স্থানীয় সংগঠন “জীববৈচিত্র্য ভারসাম্য সুরক্ষা কেন্দ্র” এর আয়োজনে ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বনলতা সেনের রাজধানী, ঐতিহাসিক নাটোর রাজবাড়ী তে অনুষ্ঠিত হলো
“জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনের সংকট ও উত্তরণের উপায়” শীর্ষক সেমিনার। সেমিনার টি অনুষ্ঠিত হলো নাটোরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ীর আনন্দ ভুবন হলরুমে।
দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মন্ত্রে উজ্জীবিত ও নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন Bangladesh Biodiversity Conservation Federation (BBCF) এর ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ প্রায় চল্লিশটির অধিক আঞ্চলিক ও স্থানীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীপেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে জনাকীর্ণ হলরুমে দিনব্যাপী সেমিনারে সংকট ও উত্তরণের উপায় বিষয়ে সুপারিশমালা গৃহীত হয়।
আজকের সেমিনারে অংশগ্রহণ করে বক্তারা বলেন,- মানুষের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে দেশের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনের সংকট ও উত্তরনের জন্য সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ, গবেষক, পরিবেশবিদ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নেতৃবৃন্দ। আজ শনিবার নাটোরে অনুষ্ঠিত জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনের সংকট ও উত্তরনের উপায় শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। নাটোর রানী ভবানী রাজ বাড়ি চত্বরের আনন্দ ভবনে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ভিসি প্রফেসর বিধান চন্দ্র দাস। বিবিসিএফ এর সভাপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে এবং আব্দুল হাকিমের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিবিসিএফ -এর প্রধান উপদেষ্টা ড.মোল্যা রেজাউল করিম, এনএস সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জহিরুল ইসলাম, নায়েম এর মহাপরিচালক (অবঃ) প্রফেসর ড. লোকমান হোসেন, নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড.এফএম আলী হায়দার, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র সদস্য সচিব শরীফ জামিল, বিবিসিএফ এর সাবেক সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন মুকুল,প্রফেসর অলোক মৈত্র, ড.হেলাল উদ্দিন মৃধা, মুক্তার হোসেন,সাইফুল ইসলাম সহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র দাস, আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন প্রফেসর ডক্টর জালাল উদ্দীন সরদার, চিফ ভেটেরিনারিয়ান ড. মোঃ হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ, প্রথম আলোর নাটোর স্টাফ রিপোর্টার এ্যডভোকেট মোঃ মোক্তার হোসেন, বাংলাদেশ জল ও পরিবেশ ইনিষ্টিটিউটের পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান, বিবিসিএফ এর সহ সভাপতি বৃন্দ ও নেতৃবৃন্দ।
আয়োজক সংগঠন টির সভাপতি ড. ড.হেলাল উদ্দিন মৃধা, সাধারন সম্পাদক Abdul Hakim ও তাদের সংগঠনের অন্যন্য নেতাকর্মীদের নিরলস ভূমিকায় একটা হৃদয়গ্রাহী, নিখুঁত ও সুপরিকল্পিত সেমিনার উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন। এই সেমিনারের মাধ্যমে দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মন্ত্রে নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবীরা যেমন উজ্জীবিত হয়েছেন, ঠিক তেমনই একটা স্থানীয় সংগঠনের আন্তরিকতা ও সুন্দর ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার মাধ্যমে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সেক্টর টি যে আলোকিত হচ্ছে তার সুবাতাস ও ঝলকানির দ্যুতি ছড়িয়ে পড়লো। নিরলস প্রচেষ্টায় সুন্দর সেমিনারের আয়োজন ও অংশগ্রহনকারী সতলকে অভিনন্দন জানাই।